প্রতিবেদন – অর্পিতা দে
শান্তিনিকেতনের প্রতি বাঙালির নস্টালজিয়া চিরকালের আর সেই নস্টালজিয়ায় ভর করেই শিকড় গজিয়ে সময়ের সাথে বেড়ে উঠেছে আরও এক বটবৃক্ষ; যতদিন গেছে সে তার ঝুড়ি নামিয়ে বিশালাকার ধারণ করেছে, বোলপুর ইলামবাজার অঞ্চলের দ্বারন্দা গ্রামের ‘বনলক্ষ্মী’। ষাটের দশকে নিরঞ্জন সান্যাল রবীন্দ্রভাবনায় অনুপ্রানিত হয়ে শান্তিনিকেতনের কাছে দ্বারোন্দায় গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে মূলতঃ রবীন্দ্রভাবধারায় গড়ে তোলেন বনলক্ষ্মী। সেই সময় যে জমি তিনি কিনেছিলেন তা ছিল সম্পূর্ণ খালি ও অনুর্বর। স্থানীয় গ্রামীণ মানুষের সহায়তায় সেই খালি অনুর্বর জমিকে চাষ যোগ্য করে তাতে ফসল ফলিয়ে তৈরি করেন ফসলের ক্ষেত, সব্জী, ফলের বাগান। আশ্রয় দেন বহু মানুষকে। নিরঞ্জন সান্যালের অনুপ্রেরণায় একে একে যুক্ত হন বনানী চক্রবর্তী, পার্বতী ভট্টাচার্য্য এবং বনলক্ষ্মীর বাকি সদস্যরাও। বনলক্ষ্মী তার বটের ঝুরি বিস্তার করে ক্রমশ বেড়ে উঠতে থাকে। সুমিত্রা সিংহ, কানন পাল, মিন্টু পালরা নিজের হাতে বনলক্ষ্মীর চালনার এক এক ক্ষেত্রের দায়িত্ব তুলে নেন। বনলক্ষ্মীর ঘি, আচার ও বিভিন্ন পণ্য আজ সারা বিশ্বের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে; কিন্তু তার এই নিজস্ব এক একটি পণ্য তৈরির পিছনেও আছে কিছু গল্প, ইতিহাস। কানন পাল তার নিজস্ব ভাবনায় তৈরী করেন বনলক্ষ্মীর ঘি। বাগানের ফল থেকে তৈরী হয় বিভিন্ন রকমের জ্যাম, জেলী, আচার। এই বিশাল কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সময়ের সাথে বৃদ্ধি পেতে থাকে বনলক্ষ্মীর সদস্য সংখ্যাও। এই কর্মকান্ডকে আরোও সুষ্ঠভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে নব্বইয়ের দশকে তৈরী করা হয় বনলক্ষ্মীর ক্যান্টিন। জমিতে উৎপাদিত ফসল, পুকুরের মাছ আর সব্জী এইসব দিয়েই মহিলা সদস্যদের তত্বাবধানে সাধারণ বাঙালি রান্নার পদ রাঁধেন স্থানীয় আদিবাসী মহিলারা। বনলক্ষ্মীর এই ক্যান্টিনের রান্না আজ শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীর কাছেই নয় প্রবাসী বাঙালীদের কাছেও আজ অত্যন্ত প্রিয়। নিরঞ্জন সান্যাল মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই বনলক্ষ্মীর চারা পুঁতেছিলেন তা আজ বিরাট ঝুরির বিস্তার করে এক বিশালকার বৃক্ষের রূপ ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। তার পিছনে আছে নিরঞ্জন সান্যাল সহ তৎকালীন ও বর্তমান সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মানুষের প্রতি নিরন্তর ভালোবাসা।
এটা ঠিক যে বনলক্ষী র খাবার , আচার, ঘি বিখ্যাত। বেগুনের আচার ওখানে ই প্রথম আস্বাদ করে , তার প্রেমে পড়ে গেলাম। আজ ও গেলে সংগ্ৰহ করি। এদের আরো সমৃদ্ধি কামনা করি।