বাঙালি মাত্রই ভোজনরসিক সে এপার বাংলাই হোক কিংবা ওপার বাংলা।তবে বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে দুই বাংলার যে মেলবন্ধন ঘটেছে তা বলাই বাহুল্য। তাই বাঙালির হেঁশেলে আজ দুই বাংলারই স্বাদ পাওয়া যায়; সে কচুশাক বাটা হোক কি লাউপাতায় চিংড়িভাপা অথবা চিংড়ির মালাইকারি কিংবা সর্ষে ইলিশ। রান্নার প্রতি প্রেম বাঙালির মজ্জাগত। কিন্তু রান্নার প্রতি ভালোবাসাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিতে কজনই বা পারেন । আর তেমনটাই করেছেন বীরভূম, শান্তিনিকেতনের দ্বারোন্দা গ্রামের এক গ্রাম্য গৃহবধূ পুতুল পাল।প্রায় ষাটের দশকে পূর্ববঙ্গ থেকে বৈবাহিক সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে। পরবর্তীকালে রান্নার প্রতি নিজের ভালোবাসা এবং পারিবারিক সহযোগিতা ও কাছের মানুষদের উৎসাহেই রন্ধনশিল্পকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নেন পুতুল। গ্রামের বেশকিছু মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে আজ তিনি সফল হয়েছেন এক বিরাট কর্মযোজ্ঞে | তৈরী করে ফেলেছেন দুই বাংলার মেলবন্ধনে আস্ত এক হেঁশেল যার নাম ‘বরিশালের রান্নাঘর’। মূলত মহিলা পরিচালিত এই হেঁশেলে শাগ, সুক্তো, চচ্চড়ি থেকে শুরু করে এঁচোড়, মোচা, পোস্তর বড়া, পনির, কাতলা, মৌরলা, পাবদা, গলদা, ইলিশ, ভেটকি এছাড়াও ডিম, পাঁঠার অথবা মুরগীর মাংস, দই, চাটনি, পাঁপড় সবই মিলবে পকেটসাধ্য দামে। সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় অর্ডারমাফিক রান্নার প্রস্তুতি।বেশী পরিমানের রান্না আজও হয় পেল্লাই দুটি মাটির উনুনে। পুতুল নিজে হাতে তদারকি করেন তার সহকারীদের রান্নার কাজে।তার তত্বাবধানেই চলে হেঁশেলের রান্নার কাজ থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন।প্রতিদিনের মেনু তৈরী হয় মরসুমী খাবারে।অতিথি আপ্যায়ন চলে সারাদিন। দিনের শেষে ওদের চোখে মুখে লুকিয়ে থাকে এক অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি।তাই কখনও শান্তিনিকেতন এলে একবার ঢুঁ মারতেই হয় পুতুলদির এই হেঁশেলে ওরফে ‘বরিশাশালের রান্নাঘরে’। তবে শুধু দুপুর কিংবা রাতের খাবারই নয় এখানে এলে চোখে পড়বে স্হানীয় গ্রামের মেয়েদের হাতে তৈরী বিভিন্ন হস্তশিল্প সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় সাজগোজ ও অন্দরসজ্জার টুকিটাকি জিনিসও।