ভারতীয় রাজনৈতিক সিনেমার পথিকৃৎ মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে মুখোমুখি চলচ্চিত্র সমালোচক এবং লেখক ধীমান দাশগুপ্ত
ভারতীয় রাজনৈতিক সিনেমার পথিকৃৎ মৃণাল সেন, তার প্রতিটি ছবিই যেন তিনি একটি সদ্য স্বাধীন দেশের এক অকপট দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তৈরি করেছেন। পরিচালক ভারতের বাস্তবতা চিত্রিত করার জন্য সিনেমাটিক সত্যের ক্যানভাস হিসাবে তার ছবিকে ব্যবহার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। মৃণাল সেন বা ঋত্বিক ঘটকের মতো চলচ্চিত্র নির্মাতাদের যা অনন্য করে তোলে তা হল তাদের সিনেমাটিক দৃষ্টিভঙ্গি। দর্শক মনে করেন না যে তারা দারিদ্র্য বা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সংগ্রামের থিম নিয়ে একটি চলচ্চিত্র দেখছেন, বরং পর্দার চরিত্রগুলির আশা, আকাঙ্ক্ষা এবং পরিশ্রমের সাথে নিজেকে একক ভাবে অনুভব করেন। দূর থেকে বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করার পরিবর্তে, মৃণাল সেন তার ছবিতে সেটিকে মূর্ত করেছেন।
মৃণাল সেন ছিলেন একজন গভীর অন্তর্নিহিত চলচ্চিত্র নির্মাতা, যিনি বিশ্বের অসমতা নিয়ে যতটা প্রশ্ন তুলেছিলেন, ততটাই তার নিজের রাজনৈতিক প্রান্তিককরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তার এই নিজস্বতা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে স্পষ্ট হয় যেখানে তার নায়ক একজন রাজনৈতিক কর্মী, তার নিজের দলের মতাদর্শকে চ্যালেঞ্জ করে। অকালের সন্ধ্যানে ছবিতে, পরিচালক শুধুমাত্র সামাজিক অবিচারের প্রতিফলনই দেখাননি বরং সেগুলি প্রতিরোধে সিনেমার ভূমিকাও দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন।
মৃণাল সেন সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে এক ত্রিমাত্রিক প্রতি তুলনা চলে আসে; সেই বিষয়ে চলচ্চিত্র সমালোচক এবং লেখক ধীমান দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন “ঠিক যেভাবে মানিক বন্দোপাধ্যায়কে বুঝতে গেলে পাশে তারাশংকর এবং বিভূতিভূষণকে রাখলে সুবিধা হয়, তেমনই মৃণাল সেনকে বুঝতে গেলে তারপাশে ঋত্বিক ঘটক এবং সত্যজিত রায়কে বসালে সুবিধে হয়। ঋত্বিকের মানুষ, আপামর মানুষ, মৃণালের বিদ্রোহী মানুষ, সত্যজিতের আর্টিস্ট অথবা ইন্টেলেকচুয়াল। সত্যজিত বহির্মুখী, মৃণাল অন্তর্মুখী আর ঋত্বিক আত্মমুখী। সত্যজিত কবি, ঋত্বিক সমাজ বিজ্ঞানী, মৃণাল প্রতিবেদক। মৃণাল তার ছবির মধ্যে দিয়ে যে বিবেকের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন আমাদের উচিত সেই বিবেকের আদর্শকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা”।