দেশকাল নামক গবেষণা সংস্থা বহুদিন ধরে দমদমের এই অঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। তাদেরই সদস্যা এবং ইতিহাসবিদ মৌমিতা সাহা জানালেন, “এই যে কামানগুলি দমদম থেকে এখন উদ্ধার হচ্ছে সেগুলিকে রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বহুকাল আগেই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। দমদমের আড়াইশো বছরের পুরনো ক্লাইভ হাউস তারমধ্যে অন্যতম। আজ যে দমদমে এইসব কামান পাওয়া যাচ্ছে তা খুবই স্বাভাবিক, নতুন কিছু নয়। এখানে আর্টিলারির জিনিসপত্র তৈরি হত কারণ দমদম হচ্ছে বেঙ্গল আর্টিলারির হেডকোয়ার্টার। শতাব্দী প্রাচীন এই কামানগুলিকে দমদম সেন্ট্রাল জেলের মোড়ে যশোহর রোডের রাস্তার দুইধারে নগর সৌন্দর্যায়নের সার্থে রাখা হয়েছিল। ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিশেষ করে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর শাসনের সময় সারা ভারতবর্ষকে তিনটি প্রেসিডেন্সি বিভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল বম্বে, মাদ্রাজ এবং বেঙ্গল। এই প্রতিটি প্রেসিডেন্সির নিজস্ব আলাদা আর্মি ছিল। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির যে আর্মি ছিল তার নাম ছিল বেঙ্গল আর্মি। এই বেঙ্গল আর্মির মধ্যে তিনটি ডিভিশন ছিল তার একটির নাম এই বেঙ্গল আর্টিলারি। সেই বেঙ্গল আর্টিলারির হেডকোয়ার্টার ছিল এই দমদম অঞ্চলে। এর জ্যুরিডিকশন ছিল বর্তমানের মায়ানমার থেকে আফগানিস্তান, এই সমগ্র অঞ্চলটি বেঙ্গল আর্টিলারি দেখাশোনা করত। সেই সময়কার যত যুদ্ধ হয়েছিল ইঙ্গ মোহীশূর, ইঙ্গ মারাঠা সেই সমস্ত যুদ্ধের সেনা পাঠানো হত দমদমের এই বেঙ্গল আর্টিলারি থেকেই। বেঙ্গল আর্টিলারির সুনাম ছিল সারা পৃথিবী জোড়া। আর সেইজন্যই ভারতবর্ষের দুটি অর্ডিনান্স ফ্যাকট্রি কাশীপুর এবং দমদম এখানেই গড়ে ওঠে। এরকম বহু কামান এই দমদমে ছিল যা অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি বেঙ্গল আর্টিলারির হেড কোয়ার্টার ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, ফেয়ারি হল অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এই যে কামানগুলো উদ্ধার হচ্ছে সেগুলোকে যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা যায় এবং এগুলিকে দমদমেই সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরা যায় তাহলে দমদমের ইতিহাসও সংরক্ষিত হবে। কারণ আমরা যেমন অন্যকোনও স্থানের ইতিহাস তুলে এনে দমদমে রাখছি না তাহলে দমদমের ইতিহাসকেও অন্যকোথাও তুলে নিয়ে যাওয়ার থেকে এখানেই রাখা শ্রেয় ।’ দমদম সেন্ট্রাল জেলের মোড়ে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া শতাব্দী প্রাচীন কামানের থেকেও প্রাচীন কামান রয়েছে দমদম ক্যান্টনমেন্টের দু’ নম্বর রেলগেটের কাছে। এক সময় এই কামানটি পড়ে থাকতে দেখা যেত রেল লাইনের ধারে পরে সেটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় রেলগেটের কাছে। এইধরনের প্রায় তেরোটি কামান আছে এই অঞ্চলে। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করলে কেউই সেভাবে কিছু বলতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের মূর্তি তারপাশেই রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে এগারো ফুট দৈর্ঘের এই প্রাচীনতম কামানটি। “ দমদম রেল গেটের কাছে রাখা এই কামানটির বয়স তুলনামুলক ভাবে অন্যান্যগুলির তুলনায় অনেক বেশী। ১৭২০ সাল নাগাদ এইধরণের কামান ব্যবহৃত হত যুদ্ধে; সম্প্রতি যে কামান্টি উদ্ধার হয়েছে রেল গেটের কামানটি তার চেয়েও প্রাচীন যা তার আকৃতি ও নল দেখলেই বোঝা যায় ”, জানালেন কামান বিশারদ অমিতাভ কারকুন।