ইতিহাস বলছে চা-এর সাথে মানুষের পরিচয় ঘটায় চীন। কথিত আছে ২৭৩৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ চীনের রাজা শেন নাং একবার এক গাছ তলায় বসেছিলেন; সেইসময় রাজার ভৃত্য সেই গাছের নীচে বসেই জল গরম করছিল, জল গরম করার সময় গাছের কিছু পাতা উড়ে এসে সেই গরম জলে পড়ে। রাজা হলেও শেন নাং ছিলেন একজন ভেষজবিদ, ভৃত্যের দেওয়া গরমজল পান করে রাজা ঠিক করেন, তাঁর ভৃত্য অজান্তে যে কাজটি করেছে, তিনি নিজে এবার সেই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করবেন। যে গাছে নীচে রাজা সেদিন বসেছিলেন সেই গাছটি ছিল ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস, যা আমাদের কাছে চা গাছ নামেই পরিচিত। এই গল্পের সত্যতা নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও ইতিহাস বলছে চীনের হান এবং তুং রাজত্বকালের সময়কার কবর থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশকিছু চা এর বাক্স। যেখানে সেই সময়কার সাল উল্লেখ ছিল সুতরাং এর থেকে সহজেই অনুমান করা যায় চা জাতীয় পানীয়ের আবিস্কারের স্থান, সময়কাল সম্পর্কে। এরপর যত সময় এগিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যেই শুরু হয় চা-পানের প্রচলন।
ভারতের চা পানের ইতিহাস কয়েকশো শতাব্দী প্রাচীন না হলেও, ১৭৫ বছরের পুরনো। চীনের এক চেটিয়া চা ব্যবসাকে হার মানাতে ব্রিটিশরা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংকেই বেছে নেয় চা চাষের উপযোগী স্থান হিসেবে। ব্রিটিশের হাত ধরে আঠারশো শতকে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং হিমালয়ের পাদদেশে শুরু হয় চা এর উৎপাদন। এরপর দার্জিলিং চা – এর বিশ্বজয় প্রায় সকলেরই জানা।
আমরা হাজির হয়েছিলাম শহর কলকাতার একটি অন্যতম দার্জিলিং চা-এর ঠেকে – চাওয়ালা-তে। এই চাওয়ালা’র ঠিকানা সল্টলেকের ই জেড সি সি প্রাঙ্গন। এখানকার কর্নধার আত্রেয়ী দত্ত জানালেন, দার্জিলিং চা’কে গরম জলে ফোটালে তার গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়, বরং চা পাতার ওপর ফুটন্ত গরম জল ঢেলে মুখ বন্ধ পাত্রে তাকে চাপা দিয়ে রাখতে হবে অন্তত তিন মিনিট। চা এর পাতার রকম ফের অনুযায়ী এই সময় নির্ভর করে। কোনও কোনও চা এর ক্ষেত্রে এই ভিজানোর সময়টি তিন থেকে পাঁচও হতে পারে, জানালেন আত্রেয়ী।
চাওয়ালায় এলে আপনি চেখে দেখতে পারেন ৪০টাকা থেকে শুরু করে ২০০টাকা দামের চা। এখানকার দার্জিলিং চা এর একটি অন্যতম বিশেষত্বই হল ফার্স্ট ফ্ল্যাশ সিঙ্গিল গার্ডেন টি। হোয়াইট টি, গ্রীন টি, এছাড়াও অপরাজিতা আর ব্লুবেরির নির্জাস দিয়ে তৈরি ব্লুবেরি টি, মুন ড্রপ টি, ব্লুমিং টি ইত্যাদি কেজি প্রতি ২০০০টাকা থেকে শুরু করে ২৫,০০০ টাকা দামের চা’ও আছে এখানে।
চাওয়ালার ঠেকে শুধু দার্জিলিং চা-এর স্বাদ গন্ধই নয়, আড্ডা জমানোর ‘টা’–এর বন্দোবস্তে রয়েছে নাহূমসের কেক, কুকিজ, লেমন টার্ট, সেইসাথে উত্তর কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন প্রসিদ্ধ নিরঞ্জন আগারের তৈরি ফিস ফ্রাই, ডিমের ডেভিল, ভেজিটেবিল চপ।
মাত্র এক বছর বয়স হলেও সল্টলেকের ই জেড সি সি’র এই চাওয়ালার ঠেককে আপন করে নিয়েছে নতুন থেকে পুরনো সব ধরনের প্রজন্মই। এখানে এলে উপরি পাওনা চা-এর টেবিলে টা- এর সাথে কখনও গিটারের ছন্দে আবার কখনও হেমন্ত কিংবা কবির সুমনের সুরে গলা মেলাতে পারেন আপনিও।