ডেনিশদের শাসনকালে হুগলী নদীর তীরবর্তী শ্রীরামপুর শহর অন্যতম বানিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। কলকাতার প্রতিবেশী এই শহরটি তৎকালীন এশিয়া এবং ইউরোপীয় সৈন্য সামন্ত, বণিক, রাষ্ট্রনায়ক ও ধর্মযাজকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শ্রীরামপুরের রাস্তায় অলিতে গলিতে ঘুরলে আজও ডাচ সংস্কৃতির উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তারই অন্যতম নিদর্শন এই ডেনমার্ক টেভরন।
১৭৮৬ সালে জেমস পার নামে এক ব্রিটিশ সরাইখানা পরিচালক শ্রীরামপুরে হুগলি নদীর ধারে ইউরোপীয় বণিকদের জন্য একটি হোটেল ও সরাইখানা তৈরি করেন নাম হয় ডেনমার্ক টেভরন।
ক্ষমতা, শাসনকাল ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পলি জমে শ্রীরামপুর তীরবর্তী হুগলি নদী যেমন নাব্যতা হারায় সেইসঙ্গে হারায় তার বানিজ্যিক জনপ্রিয়তাও। কালক্রমে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয় জেমস পারের তৈরি ডেনমার্ক টেভরন।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশনের সহযোগিতায় ডেনমার্কের ন্যাশনাল মিউজিয়াম এবং ‘শ্রীরামপুর ইনিশিয়েটিভ’-এর তত্বাবধানে এই ডেনমার্ক টেভরনটি পুনরুদ্ধার করা হয়। ২০১৫ সালে এই সরাইখানার পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হয় এবং 2018 সালে এটিকে আবার জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়৷
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই টেভরেনটির অন্দরসজ্জা মনে করিয়ে দেয় বৈচিত্রপূর্ণ ইউরোপীয় সংস্কৃতিকে। ডেনমার্কের ন্যাশনাল মিউজিয়াম এবং পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন একযোগে এই সরাইখানা এবং বাসভবনটির হেরিটেজ গুরুত্ব সংরক্ষণের কাজটি করেছেন। সেইসঙ্গে এখানকার রেস্তোরাঁর তত্বাবধানে রয়েছে দ্য পার্ক।
সুতরাং বলাই বাহুল্য ইংরেজ নাবিকদের রাত্রিযাপনের স্থান না হলেও একটি উইকেন্ড ডেস্টিনেশান হিসেবে ভ্রমণপ্রেমী বাঙালির নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে এই ডেনমার্ক টেভরেন।