বসন্তের আগমনে রবিঠাকুর বলেছেন, “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল”; কিন্তু রবিঠাকুরের সেই গৃহবাসী আজ শুধু তার ঘরের দরজা নয় মনের দরজা খুলে বসন্তের প্রকৃতির সেই রঙ নিয়ে পৌঁছে গেছে সমাজের মানুষের কাছে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া আর ফেসবুকের মাধ্যমে। কবির “নীল দিগন্তে যখন ফুলের আগুন লাগলো”, তখন প্রাকৃতিক উপায়ে ভেষজ আবির বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেই কেল্লা ফতে করেছেন একদল গ্রাম্য গৃহবধু; উদ্দেশ্য ছিল করোনার সময়ে ঘরে নিজেদের জন্য আবির বানিয়ে রঙ খেলা। নিজের কোলের বাচ্চাটাও যেন রঙের ক্ষতিকারক ক্যেমিক্যাল থেকে রক্ষা পায়, তাই ঘরোয়া উপায়ে রান্নাঘরের আর প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়েই নিজেরাই তৈরি করে ফেললেন ভেষজ আবির। এরপর ফেসবুকে পোস্ট করে জানাজানি হতেই লক্ষী লাভ। এখন শুধু নিজেদের জন্যই নয় ভেষজ আবিরের অর্ডার নিয়ে তা সামাল দিতেই রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে সঞ্চিতা, সাগরিকা, চৈতি, মীনাদের; এদের কারোর বয়স আঠাশ, তিরিশ, কিংবা পঞ্চাশের কোটায়। ঘর, সংসার, বাচ্চা সামলে নিজেদেরই একজনের বাড়িতে চলছে এই আবির তৈরির কাজ। কেউ ব্যাস্ত বীটের খোসা ছাড়িয়ে তাকে কুড়তে, কেউ ব্যাস্ত উনুনে কড়া চাপিয়ে জল গরম করে কোরা বীট দিয়ে তাকে ফুটিয়ে ঘন লাল রঙ বের করতে, কেউবা ব্যাস্ত অ্যারারুটের সাথে কর্নফ্লাওয়ার আর আতর মেশাতে, কেউ আবার গাঁদাফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে ফুটিয়ে নিচ্ছে গরম জলে। সঞ্চিতার বাড়ির ছাতেই যেন নানা রঙের মেলা বসেছে। আবির বানিয়ে বাড়ির ছাদে কড়া রোদে চলছে তা শুকানোর কাজ। দোল যে আর কদিন বাদেই, পাড়াতুতো দেওরদের সাহায্যে তারপর দোকানে দোকানে পৌঁছে দেবার পালা। এ যেন এক অন্য বসন্ত ফিরেছে বর্ধমানের এই পাল্লা গ্রামে। কলকাতা থেকে বর্ধমানের পাল্লা রোড গ্রাম মাত্র ৮৬ কিলোমিটার দুরত্ব, ওদের কলকাতা যাওয়া হয়ে ওঠেনি কখনও। কলকাতার নাম শুনলে আজও রোমাঞ্চকর লাগে ওদের যদিও ফেসবুক ওদের পৌঁছে দিয়েছে আরোও অনেকদুর তা হয়তো ওরা নিজেরাও জানে না। “দিদি আপনারা কোথা থেকে আসছেন?” বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে বছর তিনেকের মেয়েকে কোলে নিয়ে বেশকিছুটা উৎসুকভাবেই জিজ্ঞাসা করলো বছর তিরিশের গ্রাম্য গৃহবধূ সঞ্চিতা পাল।